ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকা থেকে শুরু করে দেশের বিভিন্ন প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা একমঞ্চে এসেছেন তাদের দীর্ঘদিনের দাবির পক্ষে। বুধবার (২৭ আগস্ট) রাতে রাজধানীর শাহবাগ মোড়ে এক সমাবেশে প্রকৌশল অধিকার আন্দোলনের প্রেসিডেন্ট মোহাম্মদ ওয়ালিউল্লাহ এবং বুয়েট শিক্ষার্থী জুবায়ের আহমেদ বৃহস্পতিবার থেকে দেশের সব ইঞ্জিনিয়ারিং বিশ্ববিদ্যালয়ে ‘কমপ্লিট শাটডাউন’ ঘোষণার ঘোষণা দেন।
ওয়ালিউল্লাহ বলেন,
“আমাদের তিন দফা দাবি নিয়ে আন্দোলন চলছে। গত দুই দিন সারা দেশে সড়ক অবরোধ করেছি। এখনো সরকারের পক্ষ থেকে কোনো সুনির্দিষ্ট সিদ্ধান্ত আসেনি। আমরা আরও কঠোর কর্মসূচির জন্য প্রস্তুত আছি। তবে জনগণের দুর্ভোগের কথা বিবেচনা করে আজ শাহবাগ অবরোধ করছি না।”
তিনি আরও অভিযোগ করেন, পুলিশি হামলায় ইতোমধ্যে ৫০ জনের বেশি শিক্ষার্থী আহত হয়েছেন। এই ঘটনার নিন্দা জানিয়ে তিনি বলেন, দাবি পূরণ না হওয়া পর্যন্ত আন্দোলন চলবে।
এর আগে রাত সোয়া ১০টার দিকে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বলতে শাহবাগে আসেন ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) কমিশনার শেখ মো. সাজ্জাত আলী। তিনি হামলার ঘটনায় দুঃখ প্রকাশ করেন এবং আশ্বাস দেন যে আজই একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হবে। তবে শিক্ষার্থীরা এতে সন্তুষ্ট হননি।
আন্দোলনকারী জুবায়ের আহমেদ বলেন,
“আজ থেকে দেশের সব প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ে ক্লাস ও পরীক্ষা বন্ধ থাকবে। বিকাল ৫টায় ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশনের কাউন্সিল হলে সাংবাদিকদের উপস্থিতিতে পরবর্তী কর্মসূচি ঘোষণা করা হবে।”
বুধবার সন্ধ্যায় আন্দোলনকারীদের ১১ সদস্যের প্রতিনিধি দল সরকারের জ্বালানি উপদেষ্টা ফাওজুল কবির খান এবং পরিবেশ উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসানের সঙ্গে বৈঠক করেন। প্রায় দেড় ঘণ্টা বৈঠক চললেও কোনো অগ্রগতি হয়নি। শিক্ষার্থীরা জানিয়েছেন, আজ বিকালে সরকারের সঙ্গে আরেক দফা বৈঠক হবে।
শিক্ষার্থীদের মূল তিন দফা দাবি হলো—
১. ডিপ্লোমা প্রকৌশলীদের নামের আগে “প্রকৌশলী” উপাধি ব্যবহার বন্ধ করা,
২. তাদের নবম গ্রেডে পদোন্নতি রোধ করা,
৩. দশম গ্রেডের প্রবেশপদ শুধুমাত্র বিএসসি প্রকৌশলীদের জন্য সংরক্ষণ করা।
বুধবার শাহবাগে অবরোধ চলাকালে শিক্ষার্থীরা প্রধান উপদেষ্টার বাসভবন যমুনা অভিমুখে পদযাত্রা শুরু করলে ইন্টারকন্টিনেন্টালের সামনে তাদের বাধা দেয় পুলিশ। এ সময় ধাওয়া-পাল্টাধাওয়া, সাউন্ড গ্রেনেড ও জলকামান ব্যবহার করা হয়। এতে অন্তত চারজন শিক্ষার্থী ও কয়েকজন পুলিশ আহত হন। আহতদের ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।
ঢামেক পুলিশ ক্যাম্প সূত্রে জানা যায়, আহতদের মধ্যে ছয়জনকে জরুরি বিভাগে ভর্তি করা হয়, যাদের মধ্যে দুইজনের অবস্থা আশঙ্কাজনক।
অন্যদিকে, বাংলাদেশ ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ারিং ছাত্র-শিক্ষক-পেশাজীবী সংগ্রাম পরিষদ বুধবার সাত দফা দাবি উত্থাপন করে প্রধান উপদেষ্টাকে স্মারকলিপি দিয়েছে। তবে রাজধানীর কাকরাইলে স্মারকলিপি জমা দিতে গেলে পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষ হয় এবং ২৩ জনকে আটক করা হয়।
প্রকৌশলীদের দাবির যৌক্তিকতা যাচাইয়ের জন্য সরকার একটি উচ্চপর্যায়ের কমিটি গঠন করেছে। কিন্তু বুয়েট ও অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা এই কমিটি প্রত্যাখ্যান করেছেন। তাদের দাবি, প্রকৌশল অধিকার আন্দোলনের প্রতিনিধিদের অন্তর্ভুক্ত না করে এ কমিটি গঠন করায় এর গ্রহণযোগ্যতা নেই।
আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা স্পষ্ট করে জানিয়েছেন, সরকারের তরফে নির্বাহী আদেশে প্রজ্ঞাপন জারি না হওয়া পর্যন্ত আন্দোলন চলবে। পুলিশের হামলার বিচার এবং তিন দফা দাবি বাস্তবায়নই তাদের চূড়ান্ত লক্ষ্য।
আজকের ‘কমপ্লিট শাটডাউন’ কর্মসূচির মাধ্যমে প্রকৌশল শিক্ষার্থীরা দেখিয়ে দিলেন, তারা আপসের নয়, সমাধানের অপেক্ষায় আছেন। সরকারের সঙ্গে বৈঠক ফলপ্রসূ না হলে আগামী দিনগুলোতে আরও কঠোর কর্মসূচি আসতে পারে বলে জানিয়েছেন আন্দোলনকারীরা।