← Back

গাজায় নিহত শিশুদের নাম পড়লেন কার্ডিনাল জুপ্পি - লাগলো ৭ ঘণ্টা

সাত ঘণ্টা ধরে পড়া হলো ৪৬৯ পৃষ্ঠার তালিকা—ইসরায়েল ও ফিলিস্তিনের নিহত শিশুদের স্মরণে প্রার্থনা সভা

আন্তর্জাতিক ডেস্ক
কার্ডিনাল জুপ্পি
ছবিঃ গাজায় নিহত শিশুদের নাম পড়ে কার্ডিনাল জুপ্পির সাত ঘণ্টার প্রার্থনা
ইতালির কার্ডিনাল মত্তেও জুপ্পি গাজা সংঘাতে নিহত সব শিশুর নাম একে একে উচ্চারণ করেছেন। আসমশনের প্রাক্কালে আয়োজিত প্রার্থনা সভায় তিনি ৪৬৯ পৃষ্ঠার তালিকা পড়েন, যা শেষ করতে সময় লাগে প্রায় সাত ঘণ্টা।

গাজার যুদ্ধের ভয়াবহতায় নিহত শিশুদের স্মরণে আয়োজন করা হয়েছিল বিশেষ প্রার্থনা সভা। সেখানে কার্ডিনাল জুপ্পিসহ তাঁর ডায়োসিসের কয়েক ডজন সদস্য পালাক্রমে নাম ও বয়স পড়ে শোনান।

তালিকায় ছিল ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর হামাসের হামলায় নিহত ১৬ ইসরায়েলি শিশুর নাম এবং ২০২৫ সালের ২৫ জুলাই পর্যন্ত গাজায় নিহত ১২ হাজার ২১১ ফিলিস্তিনি শিশুর নাম। ইসরায়েলি শিশুদের নাম এসেছে সরকারের তথ্যভান্ডার থেকে আর ফিলিস্তিনিদের নাম সংগ্রহ করেছে গাজা স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়।

প্রার্থনা সভা অনুষ্ঠিত হয় বোলোনিয়ার কাছে মার্জাবোত্তোর মন্টে সোলের ধ্বংসপ্রাপ্ত কাসালিয়া চার্চের ধ্বংসাবশেষে—যা দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে নাৎসিদের গণহত্যার সাক্ষী। তখন প্রায় ৮০০ মানুষ নিহত হয়েছিলেন, যাদের মধ্যে বহু শিশু ছিল। কার্ডিনাল বলেন,
“এই স্থান থেকে আমরা সব নিহতদের স্মরণ করি। তারা আমাদের শান্তির পথে আরও আন্তরিকভাবে এগোতে আহ্বান জানায়—যুদ্ধবিরতি, বন্দিদের মুক্তি এবং একটি জাতিকে জিম্মি করে না রাখার অঙ্গীকারের মাধ্যমে।”

এই উদ্যোগের আয়োজন করে স্মল ফ্যামিলি অব দ্য অ্যানানসিয়েশন নামের একটি সন্ন্যাসী সম্প্রদায়, যারা ঐতিহাসিকভাবে শান্তি ও সহনশীলতার বার্তা ছড়িয়ে আসছে।

কার্ডিনাল জুপ্পি বলেন,
“এটি এক নিরলস প্রার্থনা—যুদ্ধ থেমে যাক, অস্ত্র নীরব হোক, মানবতা জয়ী হোক।”

এদিকে গাজার একমাত্র ক্যাথলিক গির্জার পুরোহিত ফাদার গ্যাব্রিয়েল রোমানেল্লি ১৪ আগস্ট এক ভিডিও বার্তায় জানান, “পরিস্থিতি এখনো ভয়াবহ—সবখানে বোমা, মৃত্যু আর ধ্বংসযজ্ঞ। সাধারণ মানুষ ভয়ে আতঙ্কে দিন কাটাচ্ছে।” গত ১৩ জুলাই গাজার হোলি ফ্যামিলি চার্চে বিমান হামলায় দুই নারী নিহত হন।

জেরুজালেমের প্যাট্রিয়ার্ক কার্ডিনাল পিয়েরবাত্তিস্তা পিজ্জাবাল্লা ১৫ আগস্ট বলেন, “গাজায় নিরপরাধদের রক্ত কখনো বিস্মৃত হবে না।”

পোপ লিও চতুর্দশও ১৩ আগস্ট শান্তির আহ্বান জানান:
“এত সময় পরও যুদ্ধের উদ্দেশ্য কী? আমাদের সর্বদা সংলাপ ও কূটনীতির পথে হাঁটতে হবে—অস্ত্র বা সহিংসতার নয়।”

কার্ডিনাল বলেন,
“তারা (শিশুরা) আমাদের সকলকে আরও বেশি বুদ্ধিমত্তা ও আবেগ দিয়ে শান্তির পথ খুঁজতে বাধ্য করছে। এ জন্য প্রয়োজন যুদ্ধবিরতি, বন্দিদের মুক্তি এবং একটি সমগ্র জাতিকে জিম্মি করে না রাখার অঙ্গীকার।”

প্রার্থনা সভায় উপস্থিত বহু মানুষ অশ্রুসিক্ত হয়ে নিহত শিশুদের স্মরণ করেন। জুপ্পির পাঠ করা প্রতিটি নামের সঙ্গে নীরব প্রার্থনায় অংশ নেন সবাই।

বিশ্লেষকরা বলছেন, এই প্রতীকী উদ্যোগ কেবল নিহতদের প্রতি শ্রদ্ধা নয়, বরং আন্তর্জাতিক মহলকে শান্তির আহ্বান জানানোর একটি শক্তিশালী বার্তা।