← Back

লাদাখে ‘রক্তাক্ত দিন’: বিক্ষোভে পুলিশের গুলিতে চার তরুণ নিহত

রাজ্য মর্যাদা ও সাংবিধানিক সুরক্ষার দাবিতে ছয় বছরের শান্তিপূর্ণ আন্দোলন ভেঙে সহিংসতায় রূপ নিলো যুবকদের প্রতিবাদ

আন্তর্জাতিক ডেস্ক
ভারতের কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল লাদাখ
ছবিঃ ভারতের কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল লাদাখ
ভারত-চীন সীমান্তবর্তী লাদাখে ছয় বছর ধরে চলা শান্তিপূর্ণ আন্দোলন বুধবার সহিংসতায় রূপ নেয়। চাকরিহীন ও ক্ষুব্ধ তরুণদের নেতৃত্বে বিক্ষোভকারীরা পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে। এতে অন্তত চার জন নিহত এবং বহুজন আহত হয়েছেন।

ভারতের কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল লাদাখ বুধবার ইতিহাসের সবচেয়ে রক্তাক্ত বিক্ষোভের সাক্ষী হলো। রাজধানী লেহ-তে ছাত্র-যুবকদের নেতৃত্বে শতাধিক মানুষ রাজ্য মর্যাদা ও সাংবিধানিক সুরক্ষার দাবিতে বিক্ষোভে অংশ নেয়। সকাল থেকে শহরের শহীদ স্মৃতিস্তম্ভ পার্কে অনশনরত আন্দোলনকারীদের মধ্যে দু’জন প্রবীণ (৬২ ও ৭১ বছর বয়সী) হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার পর উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে।

ক্ষুব্ধ যুবকেরা পার্ক থেকে বের হয়ে স্থানীয় সরকারি ভবন ও বিজেপি কার্যালয়ের দিকে অগ্রসর হয় এবং পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে। এসময় পুলিশের গুলিতে অন্তত চার জন নিহত হন বলে আন্দোলন সমন্বয়কারীরা জানিয়েছেন। সরকারি তথ্য অনুযায়ী, অন্তত ৩০ জন নিরাপরাধ পুলিশ সদস্যও আহত হয়েছেন।

আন্দোলনের অন্যতম নেতা শিক্ষাবিদ সোনম ওয়াংচুক বলেন, “এটি যুব সমাজের ক্ষোভের বিস্ফোরণ। দীর্ঘদিন শান্তিপূর্ণ উপায়ে দাবিদাওয়া জানানো হলেও সরকার কর্ণপাত করেনি।” তবে তিনি সহিংসতার দায় অস্বীকার করে জানান, তিনি কখনোই আন্দোলনকারীদের সহিংসতার পথে হাঁটার আহ্বান দেননি।

২০১৯ সালে ভারত সরকার জম্মু-কাশ্মীরের বিশেষ মর্যাদা ও রাজ্যত্ব বাতিল করে অঞ্চলটিকে দুই ভাগে ভাগ করে— জম্মু-কাশ্মীর ও লাদাখ। জম্মু-কাশ্মীরে আংশিক আইনসভা থাকলেও লাদাখে তা নেই, ফলে জনগণ নির্বাচিত প্রতিনিধি ছাড়াই কেন্দ্রীয় আমলাদের শাসনের অধীনে রয়েছে। লাদাখিরা চাইছে—

রাজ্য মর্যাদা পুনঃপ্রতিষ্ঠা,

ভারতের সংবিধানের ষষ্ঠ তফসিলের অন্তর্ভুক্তি (আদিবাসী ও উপজাতি জনগোষ্ঠীর জন্য বিশেষ সুরক্ষা),

এবং স্থানীয় যুবকদের কর্মসংস্থানের নিশ্চয়তা।

লাদাখের শিক্ষিত জনগোষ্ঠী প্রায় ৯৭ শতাংশ হলেও সাম্প্রতিক এক জরিপে দেখা গেছে, সেখানে স্নাতক তরুণদের বেকারত্বের হার ২৬.৫ শতাংশ— যা ভারতের জাতীয় গড়ের দ্বিগুণ।

রাজনৈতিক বিশ্লেষক সিদ্দিক ওয়াহিদ সতর্ক করে বলেন, “লাদাখের যুব সমাজের ক্ষোভ এখন ভয়ঙ্কর পর্যায়ে পৌঁছেছে। গত ছয় বছর ধরে তারা তাদের পরিচয় ও অধিকার হারানোর আশঙ্কায় ক্ষুব্ধ হয়ে আছে।”

লাদাখ ভারত-চীন সীমান্তের কৌশলগতভাবে গুরুত্বপূর্ণ অঞ্চল। ২০২০ সালে গালওয়ান উপত্যকায় ভারত-চীন সেনাদের সংঘর্ষে উভয় পক্ষের প্রাণহানি ঘটে। এবার একই অঞ্চলে অভ্যন্তরীণ অসন্তোষ ভারতের জন্য নতুন নিরাপত্তা চ্যালেঞ্জ হয়ে উঠছে।