← Back

ইন্দোনেশিয়ায় দশ লাখ বছরেরও পুরোনো হাতিয়ার আবিষ্কার

মানব বিবর্তনের টাইমলাইন পাল্টে দিচ্ছে সুলাওয়েসির নতুন আবিষ্কার

আন্তর্জাতিক ডেস্ক
হাতিয়ার
ছবিঃ ইন্দোনেশিয়ায় আবিষ্কৃত ১০ লাখ বছরের‌ও পূরনো হাতিয়ার
সুলাওয়েসি দ্বীপে পাওয়া প্রাচীন পাথরের সরঞ্জাম প্রমাণ করছে, মানুষের পূর্বপুরুষরা

মানব বিবর্তনের ইতিহাসে আরেকটি যুগান্তকারী সংযোজন ঘটলো ইন্দোনেশিয়ায়। প্রত্নতাত্ত্বিকরা সুলাওয়েসি দ্বীপে আবিষ্কার করেছেন এক মিলিয়ন বছরেরও বেশি পুরোনো পাথরের সরঞ্জাম। এই আবিষ্কার শুধু প্রযুক্তির প্রাচীনতা নয়, বরং মানুষের পূর্বপুরুষরা কখন এবং কীভাবে সমুদ্র পাড়ি দিয়েছিল—সে সম্পর্কে আমাদের পূর্বধারণাকেও পাল্টে দিচ্ছে।

এক মিলিয়ন বছরের সাক্ষী: ক্যালিও সাইট

সুলাওয়েসির ক্যালিও (Calio) প্রত্নতাত্ত্বিক স্থানে পাওয়া এই সরঞ্জামগুলোর বয়স কমপক্ষে ১.০৪ মিলিয়ন বছর।

এগুলো ছোট আকারের ধারালো ফ্লেক বা টুকরো, সম্ভবত কাটা বা শিকার করার কাজে ব্যবহৃত হতো।

এখনো কোনো মানব জীবাশ্ম (ফসিল) পাওয়া যায়নি, তবে গবেষকরা ধারণা করছেন এগুলো হোমো ইরেক্টাস প্রজাতির হতে পারে।

ওয়ালেস লাইন ভেদ করা: বিস্ময়কর সমুদ্রযাত্রা

সবচেয়ে বড় চমক হলো—এই আবিষ্কার প্রমাণ করছে, মানুষ বা মানুষের পূর্বপুরুষরা বহু আগেই ওয়ালেস লাইন ভেদ করেছিল।

ওয়ালেস লাইন হলো এক প্রাকৃতিক জীবভৌগোলিক সীমারেখা, যা এশিয়ার প্রজাতি আর অস্ট্রেলেশিয়ার প্রজাতিকে আলাদা করে রেখেছে।

এত দূর সমুদ্রপথ অতিক্রম করার দক্ষতা আধুনিক মানুষের (হোমো সেপিয়েন্স) আগেই বিদ্যমান ছিল, যা আগে কোনো গবেষকই নিশ্চিত করে বলতে পারেননি।

 

কোন প্রজাতি তৈরি করেছিল এই সরঞ্জাম?

যদিও নিশ্চিত প্রমাণ নেই, তবুও গবেষকদের মতে—

হোমো ইরেক্টাস সম্ভবত এ যাত্রা করেছিল, কারণ তারা এশিয়া জুড়ে বিস্তৃত ছিল।

কাছের দ্বীপ ফ্লোরেস-এ পাওয়া গেছে ভিন্নধর্মী প্রমাণ—সেখানে আবিষ্কৃত হয়েছে খর্বাকৃতির হোমো ফ্লোরেসিয়েনসিস বা “হবিট মানুষ”, যাদের উদ্ভব সম্ভবত দ্বীপের বিচ্ছিন্নতার প্রভাবে ঘটেছিল।

 

সুলাওয়েসি, যেহেতু বড় ও বৈচিত্র্যময় দ্বীপ, তাই বিজ্ঞানীরা কৌতূহলী—এখানে বসবাস করা প্রাচীন মানুষের বিবর্তন কোন পথে গিয়েছিল?

 

মানব বিবর্তন গবেষণায় নতুন অধ্যায়

এই আবিষ্কার কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন উত্থাপন করে

এক মিলিয়ন বছর আগে সমুদ্র পাড়ি দেওয়ার ক্ষমতা কোন প্রজাতির ছিল?

দ্বীপের বিচ্ছিন্নতা কি নতুন প্রজাতির উদ্ভব ঘটিয়েছে?

ওয়ালেসিয়া অঞ্চলের (Wallacea) ভূমিকা মানব বিবর্তনের ইতিহাসে কতটা গুরুত্বপূর্ণ?

বিশেষজ্ঞ মত

প্রধান গবেষক বুদিয়ান্তো হাকিম (Nature, ২০২৫) বলেন—

> “সুলাওয়েসির এই সরঞ্জামগুলো শুধু প্রাচীন প্রযুক্তির নিদর্শন নয়, বরং মানবজাতির অভূতপূর্ব অভিযাত্রার প্রমাণ। ওয়ালেস লাইন ভেদ করে এত আগেই সমুদ্র অতিক্রম করা হয়েছে, এটা কল্পনাতীত।”

সুলাওয়েসির এই আবিষ্কার দেখিয়ে দিল, মানবজাতির ইতিহাস আমাদের ধারণার চেয়েও অনেক জটিল ও রোমাঞ্চকর।

এক মিলিয়ন বছর আগেই মানুষ বা মানুষের পূর্বপুরুষরা শুধু টিকে থাকেনি, বরং সমুদ্র পাড়ি দিয়ে নতুন ভূমি আবিষ্কার করেছে।

মানব বিবর্তনের ইতিহাসে এই নতুন অধ্যায় আমাদের আবারও মনে করিয়ে দেয়—আমরা আজ যে আধুনিক মানুষ, তার শিকড় গড়ে উঠেছিল সাহস, অভিযাত্রা আর বেঁচে থাকার লড়াইয়ের মধ্য দিয়ে।