← Back

ওসমান দেম্বেলের উত্থান: গোলশূন্য ড্রিবলার থেকে ব্যালন ডি’অর জয়

নতুন ভূমিকায় পিএসজির হয়ে রেকর্ড ভাঙা মৌসুম শেষে ইতিহাস গড়লেন ফরাসি তারকা

আন্তর্জাতিক ডেস্ক
ওসমান দেম্বেলের ব্যালন ডি’অর জয়
ছবিঃ ওসমান দেম্বেলের ব্যালন ডি’অর জয় | সংগৃহীত
ওসমান দেম্বেলে—যার পরিচয় একসময় ছিলো চমকপ্রদ ড্রিবলিং, অনিয়মিত গোল, আর ইনজুরিতে ভরা ক্যারিয়ার। সেই দেম্বেলেই এবার লিখলেন সোনালি অধ্যায়। প্যারিসে সোমবার রাতে (২২ সেপ্টেম্বর ২০২৫) ব্রাজিলিয়ান কিংবদন্তি রোনালদিনহোর হাত থেকে ব্যালন ডি’অর গ্রহণ করে হয়ে গেলেন বিশ্বের সেরা।

ফুটবল বিশ্বে ওসমান দেম্বেলের ক্যারিয়ারটা ছিল উত্থান-পতনে ভরা। রেনে থেকে বরুসিয়া ডর্টমুন্ড হয়ে বার্সেলোনা—সব জায়গায়ই আলো ছড়িয়েছেন তিনি, তবে আঘাতপ্রবণতা আর গোলের ঘাটতি তাঁকে বারবার পিছনে টেনে ধরেছিল। কিন্তু লুইস এনরিকে’র অধীনে পিএসজিতে দেম্বেলের গল্পটাই বদলে যায়।

গত মৌসুমে কিলিয়ান এমবাপ্পে রিয়াল মাদ্রিদে চলে যাওয়ার পর পিএসজির আক্রমণভাগে শূন্যতা দেখা দেয়। কোচ এনরিকে সেই শূন্যতা পূরণে দেম্বেলেকে এনে দাঁড় করান ‘ফলস নাইন’ ভূমিকায়। হঠাৎ করেই ফরাসি ফরোয়ার্ড শুরু করেন গোলের বন্যা—শীতকাল আর বসন্ত মিলিয়ে মাত্র ২২ ম্যাচে করেন ২৭ গোল। মৌসুম শেষে সর্বমোট গোল দাঁড়ায় ৩৫-এ, যা তাঁর বার্সেলোনায় ছয় মৌসুমের মিলিত গোলসংখ্যার প্রায় সমান।

এই গোলমেশিন রূপান্তরেই পিএসজি জিতেছে ঐতিহাসিক ট্রেবল—লিগ ওয়ান, ফ্রেঞ্চ কাপ, আর চ্যাম্পিয়নস লিগ। ক্লাব বিশ্বকাপে যদিও রানার্স-আপ হতে হয়, তবে দেম্বেলের প্রভাব সেখানে ছিল সুস্পষ্ট।

তার গোলের ধরনও বদলে গেছে। একসময় শুধুই ড্রিবল ভরসা ছিলো, এখন তিনি শিখেছেন ছোট ছোট ট্যাপ-ইন, দ্রুত সিদ্ধান্ত আর জায়গা বুঝে গোল করা। নিজেই বলেছেন, “আগে ডান প্রান্তে খেলে তিন-চারজনকে কাটিয়ে গোল করতে হতো। এখন নাম্বার ৯ হিসেবে অনেক সহজ—শুধু জায়গা বুঝে ফিনিশ করতে হয়।”

এবারের ব্যালন ডি’অর তাঁকে দাঁড় করালো ফরাসি কিংবদন্তিদের কাতারে—রেমন্ড কোপা, মিশেল প্লাতিনি, জিদান, বেনজেমাদের উত্তরসূরি হিসেবে। ১৯৯১ সালে মার্সেইয়ের পাপাঁর পর তিনিই প্রথম ফরাসি ক্লাবের হয়ে ব্যালন ডি’অর জিতলেন।

অবশ্য দেম্বেলের যাত্রা শুধু গোলেই সীমাবদ্ধ নয়। তিনি দলীয় খেলাতেও নিজেকে খাপ খাইয়ে নিয়েছেন। একসময় সমালোচিত ছিলেন ‘একলা খেলোয়াড়’ হিসেবে, এখন তাঁকে দেখা যায় প্রতিপক্ষের গোলকিক ব্লক করতে, আক্রমণভাগে প্রেসিং নেতৃত্ব দিতে। তিনি নিজেই বলেছেন, “একজন ফরোয়ার্ডের সুযোগসন্ধানী হওয়া যথেষ্ট নয়, রক্ষণেও অবদান রাখতে হয়।”

বার্সেলোনায় একসময় ‘চোটে ভাঙা প্রতিভা’ হিসেবে যাকে বিদ্রূপ করা হতো, সেই দেম্বেলেই এখন বিশ্বসেরা ফুটবলার।