দেশে নগদ অর্থের ব্যবহার কমিয়ে ‘ক্যাশলেস সমাজ’ গঠনের লক্ষ্যে নতুন পদক্ষেপ নিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। আগামী ১ নভেম্বর ২০২৫ থেকে জাতীয় পেমেন্ট সুইচ বাংলাদেশ (এনপিএসবি) প্ল্যাটফর্মের মাধ্যমে ব্যাংক, মোবাইল ফাইন্যান্সিয়াল সার্ভিস (এমএফএস) এবং পেমেন্ট সার্ভিস প্রোভাইডার (পিএসপি) প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে ইন্টার-অপারেবল লেনদেন চালু হবে।
সোমবার (১৩ অক্টোবর) বাংলাদেশ ব্যাংকের পেমেন্ট সিস্টেম ডিপার্টমেন্ট এক প্রজ্ঞাপনে এ তথ্য জানায়।
এই নতুন ব্যবস্থার আওতায় গ্রাহকরা সরাসরি ব্যাংক অ্যাকাউন্ট থেকে বিকাশ, নগদ, রকেটসহ যেকোনো এমএফএস বা পিএসপি অ্যাকাউন্টে অর্থ পাঠাতে পারবেন। একইভাবে এমএফএস অ্যাকাউন্ট থেকেও তাৎক্ষণিকভাবে ব্যাংক অ্যাকাউন্টে টাকা স্থানান্তর করা যাবে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের সার্কুলার অনুযায়ী, ইন্টার-অপারেবল লেনদেনের ক্ষেত্রে নির্দিষ্ট ফি প্রযোজ্য হবে।
ব্যাংক থেকে অর্থ প্রেরণে সর্বোচ্চ ০.১৫% ফি,
পেমেন্ট সার্ভিস প্রোভাইডার থেকে ০.২০% ফি, এবং
এমএফএস থেকে ব্যাংকে পাঠানোর ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ ০.৮৫% ফি নেওয়া যাবে।
উদাহরণস্বরূপ, ব্যাংক থেকে মোবাইল অ্যাকাউন্টে ১,০০০ টাকা পাঠালে সর্বোচ্চ ১ টাকা ৫০ পয়সা চার্জ হবে। পিএসপি থেকে এমএফএসে টাকা পাঠাতে ২ টাকা এবং এমএফএস থেকে ব্যাংকে পাঠাতে সর্বোচ্চ ৮ টাকা ৫০ পয়সা পর্যন্ত ফি প্রযোজ্য হবে। তবে প্রাপকের কাছ থেকে কোনো চার্জ নেওয়া যাবে না, সব খরচ প্রেরককেই বহন করতে হবে।
বাংলাদেশ ব্যাংক জানিয়েছে, এনপিএসবি-ভিত্তিক এই ইন্টার-অপারেবল প্ল্যাটফর্ম দেশের ডিজিটাল আর্থিক অন্তর্ভুক্তি বাড়াবে এবং নগদবিহীন লেনদেনকে ত্বরান্বিত করবে। ফলে লেনদেন হবে আরও দ্রুত, নিরাপদ ও স্বচ্ছ।
অর্থনীতিবিদদের মতে, এই উদ্যোগ গ্রামীণ অর্থনীতিতেও ডিজিটাল লেনদেনের সুযোগ বাড়াবে এবং সরকারি রাজস্ব সংগ্রহে ইতিবাচক প্রভাব ফেলবে।
সম্প্রতি এক অনুষ্ঠানে বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আহসান এইচ মনসুর জানান, প্রতি বছর কেন্দ্রীয় ব্যাংক কাগজের নোট ছাপাতে প্রায় ২০ হাজার কোটি টাকা ব্যয় করে, যা পরিবহন ও সংরক্ষণে ঝুঁকিপূর্ণ এবং সংক্রামক রোগের ঝুঁকি তৈরি করে। তাই নগদবিহীন লেনদেনই সময়, নিরাপত্তা ও অর্থনৈতিক দক্ষতার জন্য জরুরি।
বর্তমানে বাংলাদেশে অনুমোদিত ১৩টি মোবাইল ফাইন্যান্সিয়াল সার্ভিস (এমএফএস) প্রতিষ্ঠান এবং ৯টি পেমেন্ট সার্ভিস প্রোভাইডার (পিএসপি) কার্যক্রম পরিচালনা করছে। এর মধ্যে বিকাশ, নগদ ও রকেট সবচেয়ে জনপ্রিয় এমএফএস, আর পিএসপি হিসেবে রয়েছে আইপে, ডি মানি, রিকার্শন ফিনটেকসহ আরও কয়েকটি প্রতিষ্ঠান।
বাংলাদেশ ব্যাংক আশা করছে, নতুন ইন্টার-অপারেবল ব্যবস্থাটি দেশের আর্থিক খাতে একটি বড় পরিবর্তন আনবে এবং ডিজিটাল বাংলাদেশ বাস্তবায়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।